
মাদারীপুরের ঘাট এলাকায় নোঙর করা অবস্থায় পদ্মা নদীতে একটি ফেরি ডুবে যায়। এর আগে সাহসিকতার সঙ্গে ফেরিটিতে থাকা ১৯টি যানবাহন ও প্রায় চারশ’ যাত্রীকে রক্ষা করেছেন চালক।
রাণীগঞ্জ নামের এ বাহনটি একটি ডাম্ব ফেরি। এতে ইনচার্জ মাস্টার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ফজলুল করিম।
সোমবার সকালে ঘটা এ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে চালক বলেন, ফেরির তলা ফেটে যাওয়ার পর বুঝলাম হাতে সময় কম। যেকোনো সময় ডুবইতে পারে। পরে তাড়াতাড়ি করে ঘাটে সব যাত্রীবাহী গাড়ি আনলোড করি। কাউকে কিছু বুঝতে দেই নাই।
রাণীগঞ্জ নামের এ ফেরির নিজস্ব ইঞ্জিন নেই, যানবাহন ওঠানোর পর অন্য একটি শক্তিশালী জাহাজ ফেরিটিকে ঠেলে নিয়ে যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে এই মডেলের ফেরিগুলোর প্রচলন হয়। যার কিছু এখনো পদ্মা নদীতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের মধ্যে চলাচল করে।
রাণীগঞ্জ ফেরিটির বয়স অন্তত ৬০ বছর। রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেরিটি ৭টি ট্রাক, ৫টি যাত্রীবোঝাই বাস ও ৭টি ছোট গাড়ি মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায় ফেরিটি। পাশেই চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। ফেরিটিতে যাত্রী ও কর্মীসহ চার শতাধিক মানুষ ছিল।
রাত ১১টার দিকে পদ্মা সেতু সংলগ্ন হাজরা চ্যানেলের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সেতু স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে প্রবল বেগে ধাক্কা খায় ফেরিটি। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে ফজলুল করিম দেখতে পান ফেরির তলা ফেটে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে।
প্রাথমিকভাবে সাব মার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বুঝতে পারেন হাতে সময় কম। যেকোনো সময় ফেরি ডুবে যেতে পারে। এমন অবস্থায় ফেরির কর্মচারীদেরকে তিনি দায়িত্ব দেন বালি, কম্বল যা কিছু আছে সেগুলো দিয়ে যতোটা সম্ভব পানি প্রবেশ ঠেকাতে। এরপর তিনি দ্রুত গতিতে ঘাটের দিকে রওনা হন।
ফজলুল করিম জানান, তখনও ঘন কুয়াশা না পড়ায় ২০ মিনিটের মধ্যে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছে যায় ফেরিটি। ততোক্ষণে ফেরির ওপরে পানি উঠতে শুরু করেছে। এরপর একে একে সব গাড়ি আনলোড করার পর তিনি ঘাটের উল্টো পাশেই ফেরিটি নোঙর করেন। ফেরির কর্মী ও পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মধ্যরাতে ফেরিটি ডুবে যায়।
চালক বলেন, আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। আমার মাথাতে এটাই ছিল যে ঘাবড়ানো যাবে না। আমি ধৈর্য হারাই নাই আর জাহাজের কোন যাত্রীকে বুঝতে দেই নাই যে এ ঘটনা ঘটেছে। কেউ বুঝেও নাই, কতো বড় বিপদ থেকে আল্লাহয় আমাদেরে বাঁচাইছে।
এদিকে, বিআইডব্লিউটি’র জিএম মো. আশিকুজ্জান জানান, ডুবে যেতে থাকা ফেরি থেকে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকার এবং পণ্যবাহী ট্রাক আগেই দ্রুত নামিয়ে ফেলায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।