
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়াসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের তীরে স্থানীয় জেলের বড়শিতে ধরা পড়েছে ২৮ কেজি ওজনের একটি রুপালি পোয়া মাছ। স্থানীয় ভাষায় এ মাছটি কালা পোয়া নামে পরিচিত। মাছটি লম্বা প্রায় সাড়ে তিন ফুট।
মাছটি বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকায়। মাছটিতে এমন কী রয়েছে, যা এত দামে বিক্রি হলো। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দিতে না পারলেও সবাই বলছেন, মাছটির ফুসফুস বা ফদানার কারণে এত দাম।
মাছটির ক্রেতা বলছেন, মাছটি হংকংয়ে রপ্তানি হবে। আর মাছটির ফুসফুস দিয়ে বিশেষ ধরনের স্যুপ ও এয়ার ব্লাডার দিয়ে বিশেষ ধরনের অপারেশনাল সুতা তৈরি হয়। তাই মাছটির এত দাম।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ডাঙ্গার পাড়ার বাসিন্দা মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে মুজিব উল্লাহর বড়শিতে এ মাছটি ধরা পড়ে।
মুজিব উল্লাহ বলেন, রোববার সকালে নৌকা নিয়ে তিনিসহ তিনজন শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়াসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান। ওই সময় তাঁরা একসঙ্গে ১০টি বড়শি সাগরে নিক্ষেপ করে নৌকায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় বড়শিতে ৭ কেজি ওজনের একটি পোয়া মাছ ধরা পড়ে। এতে তাঁর মন ভরেনি। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকি। এর মধ্যে একটি বড়শি বারবার টান দিচ্ছিলেন। মনের মধ্যে ধারণা হলো বড় কিছু বড়শিতে লেগেছে। তাঁরা বড়শি টেনে কাছে আনতে বড় মাছ দেখে আমিসহ জেলেরা আনন্দে দিশেহারা হয়ে পড়ি।
এই মুহূর্তে কী করব কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পরে নৌকা নিয়ে ফেরত আসি তীরে। তীরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বড়শিতে বড় মাছ ধরা পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিমপাড়া মৎস্য ঘাটে এসে পৌঁছালে উৎসুক জনতা মাছটি দেখতে ভিড় জমায়। পরে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকায় শাহপরীর দ্বীপ কোনারপাড়া মোহাম্মদ আমিনের ছেলে মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল মাছটি কিনে নেন।
মাছ ক্রেতা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, মাছটি ভালোভাবে বরফ দিয়ে কক্সবাজার ফিশারি ঘাটে পাঠানো হয়েছে। এ মাছের ফুসফুসের দাম অনেক বেশি হওয়ায় চট্টগ্রামে নেওয়া যায় কি না, সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
মুঠোফোনে ইসমাইল বলেন, তিনি ঝুঁকি নিয়ে মাছটি কিনেছেন। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পি কে দাশের কাছে তিনি মাছটি বিক্রি করবেন। তিনি বিদেশে মাছ ও মাছের ফদানা রপ্তানি করে থাকেন। যদি ফদানা বা ফুসফুসটির ওজন ৯০০ থেকে ৯৫০ গ্রাম হয়, তবে এটি বিক্রি করে লাভ হবে। আর ওজন কম হলে লোকসান গুনতে হবে।
সাবরাং ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল আমিন বলেন, একটি মাছ এত দামে কখনো বেচাকেনার খবর শুনিনি।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে ২৮ কেজি ওজনের বড় পোয়া মাছটি ধরা পড়ার খবর শুনেছেন। সাধারণত এত বড় পোয়া মাছ সহজে ধরা পড়ে না। পোয়া মাছের বায়ুতলি বা এয়ার ব্লাডারের কারণে মাছটির অত্যধিক মূল্য। এয়ার ব্লাডার দিয়ে বিশেষ ধরনের অপারেশনাল সুতা তৈরি হয় বলে মাছটির এত দাম বলে তিনি শুনেছেন। তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি তিনি।