
মাগুরায় সু’দের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে পাওনাদারের হাতে নিজের স্ত্রীকে তুলে দেন স্বামী। পরে পাওনাদার ইসমাইল ওই গৃহবধূকে জো’রপূ’র্বক ধর্মা’ন্তা’রিত করে বিয়েও করেন।এরপর তার উপর চলতে থাকে মানসিক ও শারীরিক নি’র্যা’তন। নি’র্যা’তনের হাত থেকে বাঁচতে এক পর্যায়ে সু’দখো’র স্বামীর বাড়ি থেকে পা’লিয়ে তাকে তা’লা’ক দেন ওই গৃহবধূ।
তারপরও ওই নারীর পিছু ছাড়ছে না ওই ব্যক্তি। বাধ্য হয়ে বিষয়টি মিমাংসার জন্য ওই নারী দারস্থ হয়েছেন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কাছে।তবে প্রথম স্বামী বলছেন, তিনি নিজ ইচ্ছায় তার স্ত্রীকে পাওনাদারের হাতে তুলে দেননি। বরং দাবিকৃত সু’দের টাকা দিতে না পারায় পাওনাদার তার স্ত্রীকে জো’রপূ’র্বক তুলে নিয়ে যান।
এদিকে অভি’যু’ক্ত ইসমাইল বলেন, স্বেচ্ছায় ওই নারী তাকে বিয়ে করেছেন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে বর্তমানে জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা জটিল এই বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করছেন। তবে মিমাংসার বিষয়টি চলমান থাকায় বিষয়টি নিয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি জেলার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা।এদিকে জেলা মহিলা পরিষদের নেত্রী বলছেন, বর্তমান যুগে বিষয়টি অকল্পনীয়। তারা ওই অ’সহায় নারীর পাশে থেকে তাকে সহায়তার করবেন।
সদর উপজেলার মনিরামপুর গ্রামের নি’র্যা’তি’তা ওই নারী জানান, ৮ বছর আগে তার বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী সুজয় বিশ্বাসের সঙ্গে। বিয়ের এক বছর পর তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ছোটখাট টা’না’পো’ড়েন থাকলেও সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে তারা ভালভাবেই সংসার জীবন অতিবাহিত করছিলেন।
বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করে তিনি জানতে পারেন একই এলাকার ইসমাইল মন্ডলের কাছ থেকে তার স্বামী সুদে টাকা ধা’র নিয়েছেন। ইসমাইলের দাবি অনুযায়ী সু’দে আসলে যার পরিমাণ ৯ লাখ টাকা। ইসমাইল তার স্বামীকে টাকার পরিশোধের জন্য নানাভাবে চা’প সৃষ্টি করছেন। মূল টাকা পরিশোধ করলেও তার স্বামী দাবিকৃত মোটা অংকের সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়।এক পর্যায়ে ইসমাইল টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীকে (তাকে) তার হাতে তুলে দিতে বলেন। ইসমাইলের চা’পে পড়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে তার স্বামী যশোর নিয়ে ইসমাইলের হাতে তুলে দেন। এর পর তাকে ধর্মন্তারিত করে ইসমাইল বিয়ে করে প্রথমে ঢাকা নিয়ে একটি বাসায় আ’ট’কে রাখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন।
মাস দুয়েক পর ইসমাইল তাকে মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে ইসমাইল এবং তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে ওই নরীর ওপর নানাভাবে মানসিক ও শা’রী’রিক নি’র্যা’তন শুরু করে। তাদের নি’র্যা’তন সহ্য করতে না পেরে তিনি প্রায় পাঁচ মাস আগে সেখান থেকে পা’লিয়ে আসেন এবং ইসমাইলকে দুই মাস আগে তা’লাক দেন। বর্তমানে তিনি মাগুরা শহরে এক নারীর আশ্রয়ে থেকে একটি ক্লিনিকে সেবিকার চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তবে তা’লাক দিলেও ইসমাইল তার পিছু ছাড়ছেন না। ফোনেসহ তার কর্মস্থলে এসে নানাভাবে ভ’য়ভী’তি দেখাচ্ছেন। এবস্থায় তিনি ইসমাইলের হাত থেকে মুক্তি পেতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিষয়টি মিমাংসার জন্য আবেদন করেছেন।ওই নারীর প্রথম স্বামী সুজয় বিশ্বাস দাবি করেন, তিনি ইসমাইলের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিলেন, তা পরিশোধ করে দেন। তারপরও ইসমাইল তার কাছে সু’দেআসলে ৯ লাখ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ডাক্তার দেখাতে গেলে ইসমাইল যশোর থেকে তাকে মা’র’ধ’র করে স্ত্রীকে জো’র করে তুলে নিয়ে যায়।
তবে অভি’যু’ক্ত ইসমাইল বলেন, তার বি’রু’দ্ধে ওঠা সব অভি’যো’গ মি’থ্যা। তিনি সুদের ব্যবসা করেন না। ওই নারীকে তিনি জো’র করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেননি। সে স্বেচ্ছায় ধর্মন্তারিত হয়ে তাকে বিয়ে করেছে। এখন তিনি তার স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান।এ বিষয়ে জেলা লিগ্যাল এইড এর আইনজীবি নারী নেত্রী অ্যাডভোকেট শাহিনা আক্তার ডেইলী বলেন, আইনগতভাবে তা’লক দিলে কোন নারীকে তার স্বামী আর স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারেন না। তাছাড়া তা’লাক দেওয়া ৯০ দিনের মধ্যে তা এমনিতেই কার্যকর হয়ে যায়। তালাক দেওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি তার সাবেক স্ত্রী উ’ত্য’ক্ত বা ভ’য়ভী’তি প্রদর্শন করেন, তবে সেটা বড় ধরনের ফৌজদারী অ’পরা’ধ হিসেবে বিচেচিত হবে।
জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী মমতাজ বেগম বলছেন, বর্তমান সময়ে সুদের কারণে একটি নারীর ওপর যে অ’ন্যায়, অ’ত্যা’চার করা হয়েছে তা অ’ক’ল্পনীয়। নারী কোন ভোগ্যপণ্য বা সম্পদ নয়, যা অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করা যায়। মহিলা পরিষদ অ’সহায় ওই নারীর পাশে থেকে তাকে সহায়তা প্রদান করবে। ওই নারী চাইলে দোষীদের বিচারের মু’খো’মু’খি করা হবে।জেলা পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, ওই নারী এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কোন অভি’যো’গ করেননি। তিনি অভি’যো’গ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।