
নব্বয়ের দশক থেকে এ পর্যন্ত হাজারো ঘণ্টা গেমিং জগতে কাটিয়েছেন শারলি কারি। তার বয়স বর্তমানে ৮৪ বছর। বর্তমানের অনেক শীর্ষস্থানীয় গেইমারের জন্মের আগে তার গেইমিং জীবন শুরু হয়।
‘দ্য এল্ডার স্ক্রলস ফাইভ: স্কাইরিম’ গেমে তার গল্পকথনের ভূয়সী প্রশংসা করেন গেমিং জগতের লোকজন। তবে তিনি এই প্রশংসাকে অনেকটাই অবান্তর বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, মানুষ যখন আমাকে লিজেন্ড অভিহিত করে, আমি বেশ বিব্রত হই। আমি এক্ষেত্রে একজন নবাগত বয়স্ক দাদিমা মাত্র। ওহিওর নিজ গৃহে কম্পিউটারের সামনে বসে দিন শুরু হয় তার।
ইউটিউবে তার ৯ লাখ সাবস্ক্রাইবার আছে। যাদের তিনি গ্র্যান্ডকিড বলেই ডাকেন। ২০১১ সালে ইউটিউবে যাত্রা শুরু হয় তার। তার প্রতিটি গেমিং ভিডিও তিনি বাই বাই গ্র্যান্ডকিডস বলে বিদায় নিয়ে শেষ করেন।
১৯৯৬ সালে তার ছেলে তাকে সিভিলাইজেশ্যন টু গেইমটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, তারপর থেকেই তার যাত্রা শুরু। তিনি বলেন, দিন রাত টানা খেলা শুরু করি আমি। প্রতিটি গেইমেই আমি মহাদেশের পর মহাদেশ বিজয় করতাম, ভালোবেসে ফেলি গেইমকে।
তার চার সন্তানদের লালন পালনের সময় বেশ কয়েক জায়গায় কাজ করতেন। তিনি সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছেন, ক্যান্ডি ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছেন, কে-মার্টে দীর্ঘদিন যাবৎ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে ৫৫ বছর বয়সে অবসর নেন।
এর প্রায় দুই যুগ পর তিনি ইউটিউবের জগতে প্রবেশ করেন। তিনি মূলত তার পছন্দের কিছু গেমিং চ্যানেলের ভিডিও দেখার জন্য একাউন্ট খোলেন। ২০১৫ সালে তার প্রথম স্কাইরিম ভিডিও আপলোড করেন। বিশালাকৃতির একটি মাকড়সার সঙ্গে লড়াই করার ভিডিওটি ২.১ মিলিয়ন ভিউ পায়।
ইউটিউবে কয়েক লাখ সাবস্ক্রাইবারের পাশাপাশি টুইটারে তার ৭৫ হাজার ও ইনস্টাগ্রামে সাত হাজার ফলোয়ার আছে শারলির। স্কাইরিমের পরবর্তী সিক্যুয়েলে তাকে একটি চরিত্র হিসেবে রাখা হবে জানায় গেমটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বেথেসদা।
ইনফ্লুয়েন্সার হবার পরিবেশ সাধারণ তরুণদের জন্য সুবিধাজনক। তবে সবার মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন শারলি। তবে এই খ্যাতির জন্য কিছুটা পরিশ্রমও করতে হয় তাকে, ভক্তদের মেইল ও মন্তব্যের উত্তর দিতে হয়।
শারলি জানান, তিনি শুরুতে অনেকদিন সব মেইল ও মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন। এক সময় খেয়াল করলেন, একাজেই তার প্রচুর সময় ব্যয় হচ্ছে, কখনো পুরো দিনই চলে যায়।
শারলি কারি বর্তমানে তার ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভালো রোজগার করছেন। গেমিং কনভেনশনে যোগ দেয়ার জন্য যাতায়াতের খরচ বহনের ব্যবস্থা হয়েছে। মহামারির কারণে বর্তমানে এই গেমিং ট্যুরগুলো স্থগিত আছে, তবে তিনি জানান, ২০২০ সালে তার দৈনন্দিন কাজে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।
তবে বর্তমানে শারীরিক জটিলতার কারণে আগের মতো নিয়মিত নন ইউটিউবে। গত মে মাসে তিনি তার ভক্তদের জানান, দ্রুত রক্তচাপ ওঠানামার কারণে তিনি কিছুদিন বিরতি নেবেন। শারলি তার এক ভিডিওতে বিভিন্ন মন্তব্যের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেন।
ভক্তদের খুশি রাখতে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার কড়া শিডিউলের ব্যাপারে ইউটিবাররা অনেক সময় ক্লান্তবোধ করেন। এই অবস্থা বার্ন আউট নামে পরিচিত। শারলি জানান, তিনি বর্তমানে এধরনের চাপ অনুভব করেন।
তিনি বলেন, অনেকেই এতো সুন্দর মন্তব্য করেন, আমি চিন্তা করি আমি তাদেরকে হতাশ করতে পারি না। মাঝে মধ্যে অত্যন্ত ক্লান্তি অনুভব করি, ছেড়ে দিতে চাই, তবে তা হয়েই ওঠে না।
তিনি তার বয়সী মানুষের সঙ্গে গেমিং নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন না। তার বয়সী মানুষদের সঙ্গে অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। তবে গেমিং নিয়ে কথা বলতে পারবেন এমন কেউ-ই ছিল না। অবশেষে ইউটিউবেই এই সুযোগ পান তিনি।